আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা চেয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ

রাখাইন সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশন (রাখাইন পরামর্শক কমিশন) এবং স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা চেয়েছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ। একই সাথে নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপগুলো অনুসরণে মিয়ানমারের বাধ্যবাধকতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
গতকাল নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতির ওপর আয়োজিত এক ব্রিফিং শেষে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দেয়া যৌথ বিবৃতিতে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং অস্থায়ী সদস্য জার্মানি, বেলজিয়াম, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এস্তোনিয়া, তিউনিসিয়া ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যৌথভাবে এই বিবৃতি দিয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের অপর দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়া বরাবরের মতোই মিয়ানমার ইস্যুতে কোনো বিবৃতি দেয়া থেকে বিরত ছিল। এতে মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন বার্গনার, শরণার্থীবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত ফিলিপো গ্রান্ডি এবং জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব ও ইউএনডিপির আঞ্চলিক পরিচালক কান্নি ইউগনারাজা ব্রিফিং দেন।
যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ জোরদার করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাখাইনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত করতে হবে। তাদের চলাচলের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নিতে হবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত অভ্যন্তরীণ বাস্তচ্যুত ব্যক্তিদের (আইডিপি) ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এসব পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারকে সমর্থন দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এ লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান এবং অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারের কাজকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এবং শরণার্থী ও আইডিপি ক্যাম্পগুলোতে থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরাতে জবাবদিহিতা একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের সাথে জড়িতদের দায়মুক্তির অবসান ঘটাতে হবে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। মিয়ানমারকে স্বাধীন তদন্ত পদ্ধতিসহ সব আন্তর্জাতিক বিচারকাঠামোর সাথে সহযোগিতা করতে হবে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শরণার্থীদের জন্য সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। শরণার্থী আইনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার আওতায় আমরা আঞ্চলিক সব রাষ্ট্রকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা ও সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে মিয়ানমার সরকারের প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করছি। আগামী ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য একটি মাইলফলক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অর্থ ও কারিগরি দিক থেকে এই নির্বাচনকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাসহ সব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আমরা প্রত্যাশা করছি।

শেয়ার করুন:
  • জনপ্রিয়
  • সাম্প্রতিক

নির্বাচিত

Don`t copy text!