লেখক: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী
বইয়ের ভুমিকায় বইটির লেখক আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী লিখেন-
যে সকল বুজুর্গানে কেরাম যুগে যুগে اربعني বা চল্লিশ হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন, তাঁরা ছিলেন তাকওয়া ও রূহানী শক্তিতে বলিয়ান। তাদের অন্তর ছিল ইল্ম তাকওয়া রূহানিয়তে সঞ্জিবীত। পবিত্র হাদিস শরীফের প্রতিটি শব্দ, হরকত ও সঠিক অর্থের দিকে লক্ষ্য রেখে যতটুকু সম্ভব সাবধানতা অবলম্বন করে আমি বাংলা অনুবাদ কর্ম শেষ করেছি। এখনও এমন অনেক লোক জীবিত আছেন, যারা দীর্ঘকাল খালিছ নিয়তে ইল্মে হাদীসের খেদমত করেছেন এবং পবিত্র ইল্মে হাদিসের সাথে জাহিরী ও বাতিনী সম্পর্ক তাদের রয়েছে। এই সকল বুজুর্গানে কেরামের নিকট আমার গুজারিশ যদি আপনাদের নিরীক্ষণ দৃষ্টিতে হাদিস শরীফের শব্দ অর্থ ও হরকতের মধ্যে কোন ভূল ধরা পড়ে তবে আমাকে অবিহিত করবেন। পরবর্তী সংস্করণে আমরা সংশোধন করব।
আমার মত স্বল্পজ্ঞানী, শুষ্ক হৃদয় ব্যক্তির পক্ষে এমন একটি কর্ম সম্পাদন করা সমীচীন কি না এ বিষয়ে চিন্তা -ভাবনায় ছিলাম। সে ভাবনা শেষ হল যেদিন আমার মা দুনিয়ার সরাইখানা ত্যাগ করে পর পারে চলে গেলেন। আমার মায়ের জীবনের শেষ রাতে কুয়াশা সিক্ত বালাই হাওরে অগণিত লোক সমবেত হয়েছিল। কুয়াশা সিক্ত বালাই হাওর আরোও সিক্ত হয়েছিল ভক্তজনের তপ্তনীরে, জানাযার পর “মা” যাদেরে শৈশবকালে কোলে তুলে যে মমতার বাঁধনে বেধে রেখেছিলেন তাদের সাথে আমিও জানাযার খাটিয়া খানা কাঁধে তুলে নিলাম। কোন অশরিরী আত্মা যেন আমার কাঁধে ফরিয়াদ করতেছিল- প্রেম প্রীতি ভালবাসার একটি জানাযা আজ পরপারের পথ অতিক্রম করছে। দাফন শেষ হলে কবরের পাশে দাড়িয়ে আল্লামা ইকবালের দু’ছত্র কবিতা পাঠ করলামমা তোমার কবর পাশে দাড়িয়ে আমি ফরিয়াদ করব। মা তুমি বল এখন আর এ দুনিয়াতে আমার কে আছে যে,গভীর রাত্রে আমার জন্য আল্লাহ তা’আলার দরবারে দু‘আ করবে ? মনে মনে ভাবলাম এত লোক সমবেত হয়েছিল আমার মা‘কে বিদায় দিতে; কিন্তু কেউ তো সঙ্গে গেলনা এমনকি আমিও না। নিঃস্বঙ্গ অবস্থায় তিনি শুয়ে রইলেন মাটির বিছানায়। জানি হাশরের দিন পর্যন্ততিনি এক দুর্গম পথ অতিক্রম করবেন। চল্লিশ বছরের সংসার বিরাগী নির্জন বাসের ফসল তিনি ভোগ করবেন। মায়ের দাফন শেষ করে মসজিদের উত্তর পাশে আমার ওয়ালিদ মুহতারাম (রহ.)-এর কবর জিয়ারত করলাম। কি অপরূপ দৃশ্য! সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত মাটির ঘরে তিনি আরাম করছেন। কবরের আবরণ কুয়াশা ভিজা ঘাস, আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা ছোট ছোট এতিমদের সজল নয়ন, রাত জাগা মুসাফির দূরের আকাশের তাঁরা, নিঝুম নিরালা গোরস্থানের বৃক্ষ শাখে কুকিলের ডাক, কুল গাছের নিচে অবস্থিত আমার মায়ের শূন্য হুজরা, আমার “বালাই হাওরের কান্না” উপন্যাসের অসহায় মানুষগুলির আকুল কান্না হৃদয়ের কানে শ্রবণ করলাম, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলাম। আমার পোড়া নয়নের জল বার বার মুছতে মুছতে ঘরে ফিরলাম। জানি এ ঘরতো ঘর নয়। ইচ্ছা অনিচ্ছায় ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে। তবুও যতদিন আছি পরপারের জন্য কিছু সংগ্রহ করি। কে যেন কানে কানে বলল তোমার ইহ-পরকালের ঠাঁই তোমার অনাগত অন্ধকার পথের আলোক বর্তিকা রহমতুল্লিল আলামীনের (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের) পবিত্র কিছু হাদিস সংকলিত কর। ব্যতিত হৃদয়ে কম্পিত হাতে কলম ধরে মা ও বাবার ইছালে ছাওয়াবের উদ্দেশ্যে চল্লিশ হাদীসের একখানা পুস্তক সংকলন করলাম। পরিশিষ্ট শিরোনামে চল্লিশ হাদীস পুস্তকের সাথে আমার লিখিত বিবিধ পুস্তক থেকে কয়েকটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে।
(আমরা এ বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।
বইয়ের পিডিএফ লিংক