মুফতীয়ে আ’যম আল্লামা মুফতী সায়্যিদ আমীমুল ইহসান (র.)

মুফতীয়ে আ’যম আল্লামা সায়্যিদ আমীমুল ইহসান (র.)

 

হযরত আল্লামা মুফতী সায়্যিদ আমীমুল ইহসান আল-মুজাদ্দিদী আল-বারাকাতী আল-হানাফী (র.) অতুলনীয় প্রতিভার অধিকারী একজন শীর্ষস্থানীয় আলিমে দীন ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকীহ, ইলমে তাসাউওফ প্রাজ্ঞ সূফী ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা। তাঁর প্রকৃত নাম সায়্যিদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান। তাঁর বংশধারা হযরত ফাতিমা (রা.)-এর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। এ কারণে তাঁর পূর্ব পুরুষগণ নামের পূর্বে সায়্যিদ শব্দ ব্যবহার করতেন। 

 

জন্ম ও বংশ পরিচয়

সায়্যিদ মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) ১৯১১ সালের ২৪ জানুয়ারী বিহার প্রদেশের মুঙ্গের জেলার অন্তর্গত পাঁচনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সায়্যিদ আবদুুল মান্নান, মাতার নাম সায়্যিদা সাজেদা। পিতা-মাতা উভয় সূত্রেই তিনি মহানবীর অধঃস্তন পুরুষ। তিনি তাঁর রচিত বিবিধ গ্রন্থে নিজ বংশ পরিচয় লিপিবদ্ধ করে যান। তাঁর নিজ হাতে লিখিত নসবনামা (বংশলতিকা) নি¤œরূপ :

সায়্যিদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান ইবনে সায়্যিদ আবদুুল মান্নান ইবনে সায়্যিদ নুরুল হাফিয ইবনে সায়্যিদ মীর শাহামত আলী ইবনে সায়্যিদ মাওলানা মীর মুযাফ্ফর আলী ইবনে সায়্যিদ মীর সাবির আলী ইবনে সায়্যিদ মীর গোলাম আলী ইবনে সায়্যিদ মীর ওয়াহিদ হোসাইন ইবনে সায়্যিদ যিরাগ শাহ ইবনে সায়্যিদ রুকনুদ্দীন ইবনে সায়্যিদ জামালুদ্দীন ইবনে সায়্যিদ আহমদ জাজনিরী ইবনে সায়্যিদ বেদারুদ্দীন মাদানী ইবনে সায়্যিদ আলী মাসঊদ মাদানী ইবনে সায়্যিদ আবুল ফাতহ মুহাম্মদ ইবরাহীম ইবনে সায়্যিদ মুহাম্মদ ফরাশ ইবনে সায়্যিদ আবিল ফারা ইবনে সায়্যিদ আবিল হাসান আল ফারিস ইবনে সায়্যিদ মুহাম্মদ আকবর ইবনে সায়্যিদ আমর আলী আদ্দান ইবনে সায়্যিদ আশরাফ উদ্দীন ইয়াহইয়া আশ শারীফ ইবনে সায়্যিদ ইমাম মুহাম্মদ নফস যাকিয়্যাহ ইবনে ইমাম সায়্যিদ আবিল হাসান যায়িদ আশ শাহীদ ইবনে ইমাম সায়্যিদ যায়নুল আবিদীন ইবনে সায়্যিদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন ইবনে বাতুলির রাসূল সায়্যিদা ফাতিমা বিনতে সাইয়িদিল মুরসালিন ওয়া শাফীঈল মুযনিবীন ওয়া রাহমাতিল্লিল আলামীন মুহাম্মদ মুস্তফা ওয়া আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

 

বাল্যকাল

সায়্যিদ আমীমুল ইহসান শৈশবের কিছু সময় নিজ মাতামহের বাড়িতে মায়ের সাথে অতিবাহিত করেন। শৈশব হতেই তাঁর আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। ধ্যান-ধারণা ও চাল-চলনে তিনি অন্যান্য সাধারণ শিশু অপেক্ষা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমÐিত ছিলেন। খেলা-ধূলায় লিপ্ত হয়ে অযথা সময় নষ্ট করা তাঁর পছন্দ হত না। তাঁর জন্মগত পরিবেশ ও পরিমÐলের মনস্তাত্বিক প্রভাব তাঁর ব্যক্তিত্বে ক্রমান্বয়ে বিকাশ লাভ করতে থাকে। এ ধারা অবলম্বন করেই তাঁর বাল্য, কৈশোর ও শিক্ষাজীবন ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে থাকে। 

 

প্রাথমিক শিক্ষা

তিনি স্বীয় পিতা ও চাচার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর চাচা সায়্যিদ আবদুুদ দাইয়ানের তত্ত¡াবধানে তিনি মাত্র তিন মাসে পূর্ণ ত্রিশ পারা কুরআন শরীফ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াতের যোগ্যতা অর্জন করেন। এসময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র পাঁচ বছর। এতদ্ব্যতীত তিনি তাঁর নিকট উর্দূ ও ফার্সী ভাষার প্রাথমিক পাঠও গ্রহণ করেন। এরপর তাঁর পিতা তাকে তদীয় মুর্শিদ সায়্যিদ আবূ মুহাম্মদ বারাকাত আলী শাহ (মৃ. ১৯২৬ খ্রি.)-এর দরবারে নিয়ে যান। তিনি তাকে নিজ তত্ত¡াবধানে রেখে তারবিয়াত ও শিক্ষা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন হতে শাহ সাহেবের দরবারে আমীমুল ইহসান (র.)-এর শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের কাজ চলতে থাকে। মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে তিনি আরবী ব্যাকরণের প্রাথমিক জ্ঞান রপ্ত করেন এবং পাশাপাশিভাবে উচ্চতর ফার্সী সাহিত্য ও তাজবীদের প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন। 

১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। এ সময়ের পূর্বে তিনি তৎকালীন কিছু বিখ্যাত আলিম এবং নিকট আত্মীয়ের নিকট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি যখন চৌদ্দ বছর বয়সে উপনীত হন তখন তিনি কলকাতা আলিয়া মাদরাসার হেড মওলভী মাওলানা মাজেদ আলী জৌনপুরীর নিকট আরবী ব্যাকরণ, ফিকহ ও যুক্তি বিদ্যার প্রাথমিক পাঠ, আবদুুল মজিদ আল মুরাদাবাদীর নিকট কিছু আরবী কিতাব, আবদুুর রহমান আল-কাবুলীর নিকট যুক্তি বিদ্যা ও উসূল বিষয়ক গ্রন্থাবলী এবং আল্লামা কারামত আলী শাহ পাঞ্জাবীর নিকট ফিক্হ ও মানতিকের প্রাথমিক শিক্ষা হাসিল করেন। নিজ চাচার নিকট সুন্দর হস্তলিপি বিদ্যা অনুশীলন এবং সে সময়কার প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফার যথাক্রমে আবদুুর রহমান খাঁ, সায়্যিদ ফযলুর রহমানের যতেœ সুন্দর হস্তলিপি এবং পাথরের গায়ে লিখন শৈলী রপ্ত করেন। 

স্বনামধন্য কারী আবদুুস সামী (মৃ. ১৯২৯ খ্রি.)-এর নিকট ইলমে কিরআত, নিজ পিতার তত্ত¡াবধানে ইউনানী চিকিৎসা শাস্ত্র এবং নিকটাত্মীয় আবদুুল করীমের তত্ত¡াবধানে ইংরেজি ভাষার প্রাথমিক পাঠ গ্রহণ করেন।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা

১৯২৬ সালে পনের বছর বয়সে সায়্যিদ আমীমুল ইহসান (র.) কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় আলিম প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদরাসার অভ্যন্তরীণ প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথমস্থান এবং মাদরাসা বোর্ডের অধীনে গৃহীত কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অসাধারণ মেধার পরিচয় দিয়ে কৃতকার্য হন। তিনি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লোয়ার স্ট্যান্ডার্ড (আলিম) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে তৃতীয়, ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ফাযিল এবং ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কামিল (হাদীস) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি আলিম পরীক্ষায়ও হাদীস বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নের সময় তিনি নি¤œলিখিত শিক্ষকমÐলীর নিকট পাঠ গ্রহণ করেন : শামসুল উলামা খাঁ বাহাদুর ড. মুহাম্মদ হিদায়েত হোসাইন (মৃ. ১৯৪২ খ্রি.), মুহাম্মদ মূসা এম.এ. (মৃ. ১৯৬৪ খ্রি.), মাওলানা মাজেদ আলী জৌনপুরী (মৃ. ১৯৩৫ খ্রি.), সফীউল্লাহ সারহাদী (মৃ. ১৯৪৭), ইয়াহইয়া সাহসারামী (মৃ. ১৯৫১), বিলায়েত হোসাইন বীরভূমী (মৃ. ১৯৮৪), ইসমাঈল সাম্ভুলী (মৃ. ১৯৩৭), জামিল আনসারী (মৃ. তাং অজ্ঞাত), সুফী ওসমান গণী (মৃ. ১৯৪১), সিদ্দীক আহমদ ইসলামাবাদী (মৃ. ১৯৬৯), আবদুুল হামীদ (মৃ. ১৯৪০), আবদুুল গফুর (মৃ. তাং অজ্ঞাত), মুহাম্মদ হোসাইন সিলেটী (মৃ. ১৯৭২) আল হুফ্ফায মুহাম্মদ ফসীহ আল-আযহারী (মৃ. ১৯৭৪), মুহাম্মদ মাযহার (মৃ. ১৯৫৪), মুহাম্মদ মুজাফ্ফর (মৃ.১৯৪৬), মুশতাক আহমদ আল কানপুরী আল মাক্কী (মৃ. ১৯৩৯), মুহাম্মদ নুরুল্লাহ স›দ্বীপী (মৃ. ১৯৪৭), নযীর উদ্দীন (মৃ. ১৯৫৩), ওয়াসী উদ্দীন (মৃ. ১৯৪৮) এবং আবদুুস সাত্তার বিহারী (জন্ম ১৯০৮) প্রমুখ।

কলকাতা মাদরাসা হতে শিক্ষা শেষ করে সায়্যিদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান (র.) তৎকালীন কতিপয় বিশেষজ্ঞ ও পÐিত ব্যক্তির নিকট জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিশেষ কয়েকটি বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি শামসুল উলামা ইয়াহইয়া সাহসারামী ও মুশতাক আহমদ আল-কানপুরীর নিকট জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যুৎপত্তিগত জ্ঞানার্জন করেন। এতদ্ব্যতীত মুশতাক আহমদ আল-কানপুরীর নিকট ইলমুল মাওয়াকিত ও ইলমুল কিয়াফার উচ্চতর জ্ঞান এবং ফাতওয়া প্রদান কৌশল অনুশীলন করেন। তাঁর নিকট হতে তিনি ফাতওয়া প্রদানের ইজাযাত (সনদ) লাভ করেন।

মুফতী সাহেব দেশ-বিদেশের বহু পÐিত সূফীসাধক ও মুহাদ্দিসের নিকট হতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে সনদ অর্জন করেন। তিনি দামিশকের প্রখ্যাত মনীষী ইমাম মুহাম্মদ আল-জাযরীর ‘হিসনে হাসীন’ এর সনদ তাঁর শ^শুর ও মুরশিদ বারাকাত আলী শাহের মাধ্যমে লাভ করেন। শাইখ ওমার হামদুন ও হিজাযের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুহাম্মদ আল-ইয়ামানী সহ ১৪জন মুহাদ্দিস থেকে ইলমে হাদীসের সনদ লাভ করেন।

 

ইলমে তাসাওউফ

মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) পারিবারিক ঐতিহ্য ও জন্মসূত্রেই সূফী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর পূর্বপুরুষ ও নিকটাত্মীয়গণ অধিকাংশই উচুঁস্তরের সূফীসাধক ছিলেন। তিনি বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত আবূ মুহাম্মদ বারাকাত আলী শাহ (র.)-এর নিকট চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশবন্দিয়া, মুজাদ্দেদিয়া ও সোহরাওয়ার্দীয়া তরীকায় বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্বীয় চাচা হযরত মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ আব্দুদ দাইয়্যান বারাকাতী এবং শ্বশুর ও মুরশিদ সায়্যিদ আবূ মুহাম্মদ বারাকাত আলী শাহ এর কাছ থেকে বিভিন্ন তরীকার ইজাযত লাভ করেন। 

নিজ কর্ম ক্ষেত্রেও তিনি আধ্যাত্মিকতার ছাপ রেখে যান। তাঁর সূফী দর্শনের বৈশিষ্ট্য হলো জ্ঞান ও তাকওয়ার সমন্বয় সাধন। তাঁর যুহ্দ ও তাকওয়ার শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে এই যে, পার্থিব কর্মব্যস্ততার মাঝে ডুবে থেকেও তিনি পার্থিব ভোগ-বিলাস ও লোভ-লালসা হতে দূরে অবস্থান করে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকতেন। তাঁর সান্নিধ্যে আসলে মানুষের মনে দুনিয়া অপেক্ষা পরকালের কথা বেশী স্মরণ হতো এবং তাঁকে দেখলে হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি বেশি ভালবাসা সৃষ্টি হতো। তিনি সর্বদা শিক্ষামূলক এবং জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় ব্যস্ত থাকতেন। তিনি মুরীদীন-মুহিব্বীনের তাযকিয়ায়ে নাফসের পাশাপাশি বাহ্যিক শিষ্টাচারও শিক্ষা দিয়েছেন। সব তরীকার মাশায়িখগণের প্রতি তিনি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতেন। 

 

কর্মজীবন

মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) ঘটনাবহুল কর্মজীবন কলকাতা ও ঢাকা কেন্দ্রিক আবর্তিত। তাঁর কর্মজীবনের প্রথম অংশ ১৯২৭-১৯৪৭ ইং পর্যন্ত কলকাতায় এবং শেষ অংশ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৪ ইং পর্যন্ত ঢাকায় অতিবাহিত হয়।

১৯২৭ সালে মুফতী সাহেব পিতৃহীন হয়ে পড়েন। পিতার জীবিত সন্তানগণের মাঝে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর পিতা মৃত্যুর দু’মাস আগে তাঁকে নিজ জুব্বা পরিয়ে দেন এবং পূর্বপুরুষ পরস্পরায় প্রাপ্ত সব কল্যাণ ও বরকতময় বস্তু প্রদান করেন। এভাবে তিনি তাঁকে নিজ স্থলাভিষিক্ত করে যান। পিতা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাই তাঁর মৃত্যুর পর মুফতী ছাহেবের কর্মধারা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাঁকে পিতৃপরিত্যক্ত সংসারের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। মাত্র বছরখানেক আগে তিনি মাদরাসায় ভর্তি হন। নিয়মিত পড়া-লেখা অব্যাহত রেখে বিধবা মায়ের সেবা-যতœ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভাই-বোনদের প্রতিপালন, পিতার ডিসপেনসারী সচল রাখা, মসজিদের তত্ত¡াবধান, ইমামতি, মক্তব পরিচালনা এবং পারিবারিক ছাপাখানা দেখাশোনা ইত্যাদি দায়িত্ব ধৈর্য ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পালন করতে থাকেন। ১৯৩৩ সালে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর উপরোক্ত দায়িত্ব সম্পাদনের পাশাপাশি নিজ বাসভবনে হাদীস, ফিক্হ ও বিভিন্ন বিষয় পাঠদানে মনোনিবেশ করেন। কালক্রমে তাঁর মেধা ও গভীর পাÐিত্যের কথা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। 

 

নাখোদা মসজিদ-মাদরাসা ও দারুল ইফতায় দায়িত্ব পালন

কলকাতার চিৎপুরে অবস্থিত নাখোদা মসজিদ দ্বীনী শিক্ষার একটি ঐতিহাসিক কেন্দ্র। ওসমান নামক জনৈক ধর্মপ্রাণ গুজরাটী কচ্চী (কচ্চ অঞ্চলের অধিবাসী) এ মসজিদটি তৈরী করেন। মসজিদের সাথে একটি মাদরাসা রয়েছে। মাদরাসার দারুল ইফতা (ফাতওয়া বিভাগ) খুবই সমৃদ্ধ। কালক্রমে এ মসজিদ ও এর দারুল ইফতা সারা বাংলার ধর্মীয় যোগাযোগ কেন্দ্রে রূপান্তরিত ও স্বীকৃত হয়। প্রতিষ্ঠানটি অবিভক্ত বাংলার ইসলামী সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি রূপেও গড়ে ওঠে। ১৯৩৪ সালে মুফতী সাহেব উক্ত মসজিদের সহকারী ইমাম ও মাদরাসার প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৩৫ সালে তাঁকে মাদরাসার দারুল ইফতায় প্রধান মুফতীর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তখন হতে তিনি জ্ঞান প্রসারের পাশাপাশি ফাতওয়া প্রদানের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মাদরাসায় তিনি হাদীস, ফিক্হ ও সাহিত্যের পাঠদান করতেন। 

নাখোদা দারুল ইফতার প্রধান মুফতী হিসেবে মুফতী সাহেবের নাম ও যশ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা সমাধানকল্পে অসংখ্য ফাতওয়া প্রদান করেন। কারো মতে, এ সংখ্যা লক্ষাধিক। এ প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে প্রদত্ত ফাতওয়া হতে তিনি ১২০০০ পৃষ্ঠা সম্বলিত একটি বৃহৎ পাÐুলিপি রেখে যান। এ পান্ডুলিপিতে প্রায় ৪০,০০০ ফাতওয়া রয়েছে। নাখোদা মসজিদ, মাদরাসা ও দারুল ইফতায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি তাঁর প্রখ্যাত হাদীস সংকলন ‘ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার’ সম্পাদন করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্ম হতে ইসলামে দীক্ষিত নওমুসলিমগণের পার্থিব ও ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্বসহ ইসলাম প্রচারের কাজে জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় চার সহস্ত্রাধিক নর-নারী ইসলামে দীক্ষিত হন।

১৯৩৭ সালে বৃটিশ সরকার তাঁকে মধ্য কলকাতায় কাযী পদে নিয়োগ করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি বঙ্গীয় সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত হন। ১৯৪০ সালে আনজুমান-ই-কুররা-বাংগাল (নিখিলবঙ্গ কারী সমিতি)-এর সভাপতি নিযুক্ত হন। তিনি সময় সময় বিচার বিভাগীয় জুরীতে যোগদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিত হতেন। এভাবে প্রায় এক যুগ ধরে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে ইসলামী ও জনহিতকর কার্যে আত্মনিয়োগ করে বাংলাদেশ পাক-ভারত উপমহাদেশের মুসলমানদের কল্যাণ সাধন করেন।

 

কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা

মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) ১৯৪২ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসায় উর্দূ প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে যান। এ সময় তিনি বহু মূল্যবান গ্রন্থও রচনা করেন। তন্মধ্যে :

আততাশাররুফ লি আদাবিত তাসাওউফ,

শারহু মুকাদ্দামাতিশ শায়খ,

লুব্বুল উসূল,

আদাবুল মুফতী,

তা’রিফাতুল ফিকহিয়্যাহ,

মিন্নাতুল বারী,

ইলমে হাদীস কে মাবাদিয়াত,

মুকাদ্দামা সুনানে আবি দাঊদ,

মারাসীলে আবী দাঊদ ইত্যাদি প্রধান।

 

ঢাকা ভিত্তিক কর্মজীবন

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর কলকাতা আলিয়া মাদরাসার এ্যাংলো আরবী বিভাগ ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। তখন তিনি কর্মরত অবস্থায় অপরাপর সহকর্মীর সাথে ঢাকায় চলে আসেন এবং স্থায়ী নিবাস স্থাপন করেন। মাদরাসা আলিয়া ঢাকায় তিনি একই পদে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত বহাল থাকেন। অতঃপর ১৯৫৫ সালে মাওলানা জাফর আহমদ ওসমানী হেড মওলবী পদ হতে অবসর গ্রহণ করার পর তিনি অস্থায়ীভাবে উক্ত পদে মনোনয়ন লাভ করেন। ১৯৫৬ সালের ১লা জুলাই তাঁর পদ স্থায়ী হয়। তখন হতে পাঠদানের পাশা-পাশি শিক্ষা বিষয়ক দফতর পরিচালনার দায়িত্বও লাভ করেন। তাঁর কর্তব্য ও নিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ নিয়মিত চাকরির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্তে¡ও সরকার তাঁকে আরো অতিরিক্ত তিন বছর উক্ত পদে বহাল রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি এতে সম্মত হননি। তিনি ১৯৬৯ সালের ১লা অক্টোবর সরকারী চাকরি হতে অবসর গ্রহণ করেন।

 

জাতীয় ঈদগাহ’র ইমাম ও বায়তুল মুকাররমের প্রথম খতীব

১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পুরানা পল্টন ময়দানে (বর্তমানে আউটার ষ্টেডিয়াম) অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ঈদগাহের ইমামতির ভার তাঁর ওপর ন্যস্ত হয়। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররম মসজিদ কমিটি সর্বসম্মতভাবে তাঁকে খতীব মনোনীত করেন। ১৯৭৪ ইং সাল পর্যন্ত তিনি বায়তুল মুকাররমের প্রথম খতীব হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। ডাক্তারের পরামর্শ এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর চার মাসের ছুটি নিয়ে বায়তুল মুকাররম ছেড়ে আসেন। ছুটি নেয়ার ৫দিন পর তিনি ইন্তিকাল করেন। ফলে তাঁকে আর বায়তুল মুকাররমে ফিরে যেতে হয়নি।

 

মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা

মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার সূত্রাপুর থানার অন্তর্গত কলুটোলা মহল্লায় একটি বড় বাড়ি ক্রয় করেন। এ বাড়ির বিপরীত দিকে রাস্তার পাশে একটি মসজিদ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। এ মসজিদ নির্মিত হয় ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে। ঢাকায় আসার পর তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে এ পরিত্যক্ত মসজিদটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করেন। সার্বিক সংস্কারকর্ম শেষ হওয়ার পর সে মসজিদে রীতিমত জুম‘আ ও জামা’আত শুরু হয়। মসজিদটি “নকশবন্দী মসজিদ” নামে পরিচিত। মুফতী ছাহেব (র.) এ নামে নামকরণ করেন এবং এর মুতাওয়াল্লীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ও তাঁর নিকটাত্মীয় মাওলানা আবদুুস সালাম আহমদ  পীর ছাহেব নারিন্দা (মৃ. ১৯৬৭) নিয়মিত এ মসজিদের ইসলাম প্রচার ও প্রসারের তৎপরতা চালিয়ে যান।

নকশবন্দী মসজিদের প্রবেশ ফটকের বাঁ পাশে মিনারার নীচে একখানা কক্ষ নির্মাণ করা হয়। মাদরাসা আলিয়া হতে অবসর গ্রহণ করার পর শেষ জীবনে মুফতী ছাহেব (র.) এ কক্ষটিতে ইসলামী বিষয় পাঠদান করতেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি মসজিদ ও মাদরাসার দায়িত্ব তাঁর কন্যার (সে সময় জীবিত একমাত্র সন্তান) ওপর ন্যস্ত করে যান। তাঁর সংস্কার করা মসজিদ ঘরখানা মুঘল ও আধুনিক স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

 

হজ্জ পালন

মুফতী সাহেব তিনবার হজ্জ পালন করেন; ১৯৫৪, ১৯৬৮ ও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। হজ্জ পালন করার সময় তিনি মক্কা ও মদীনায় অবস্থিত ইসলামের স্মৃতিমাখা এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র পদচিহ্নে ধন্য ঐতিহাসিক স্থানসমূহ পরিদর্শন করেন। এতদ্ব্যতীত তিনি হারামাইন শরীফাইনে হাদীসে নববীর দারস প্রদানও করেন। তাঁর দারসে সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর ভীড় লেগে যেত। সে সময় তিনি মুসলিম বিশে^র শ্রেষ্ঠ আলিম, চিন্তাবিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ, মুফতী, বাগ্মী, গ্রন্থকার এবং পুণ্যবান সূফীসাধকের সাক্ষাৎ লাভ করে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের সুযোগ লাভ করেন। তন্মধ্যে সিরিয়ার শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিস ও মুফতী আল্লাম শাইখ আবদুুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সান্নিধ্যে এক সপ্তাহ অবস্থান করেন।

 

বৈবাহিক জীবন

মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মুরশিদ সায়্যিদ বারাকাত আলী শাহের জ্যেষ্ঠ কন্যা সায়্যিদা মায়মুনার সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ তরফে তাঁর একজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর এ সন্তান খুব অল্প বয়সে ১৯৩৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৯ সালে প্রথমা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করার পর তিনি ১৯৩০ সালে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী সায়্যিদা ফাতিমার গর্ভে এক কন্যা ও এক পুত্র জন্ম লাভ করেন। পুত্র সন্তান সায়্যিদ মুনয়িম জন্মের কিছু দিন পর মারা যান। একমাত্র কন্যা সায়্যিদা আমিনা বয়সপ্রাপ্ত হন ও তাঁর মৃত্যু অবধি জীবিত ছিলেন। ১৯৩৭ সালে মুফতী সাহেবের দ্বিতীয়া স্ত্রীও ইন্তিকাল করেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর বোন সায়্যিদা খাদিজার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর এ বেগম নিঃসন্তান ছিলেন। মুফতী সাহেবের ইন্তিকালের দশ বছর পর ১৯৮৪ সালে তিনি ইন্তিকাল করেন।

 

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী

সায়্যিদ আমীমুল ইহসান (র.) দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সংকলন করেন। তাঁর রচিত ও প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থবলীর মধ্যে রয়েছে :

আদাবুল মুফতী (ফতওয়া প্রদানের নীতিমালা বিষয়ক গ্রন্থ)।

আওজাযুস সিয়ার (সংক্ষিপ্ত সীরাত)।

আত তাশাররুফ লি আদাবিত তাসাওউফ (তাসাওউফের রীতি-নীতি বিষয়কগ্রন্থ)।

আত তানসীদ ফিত তাজভীদ (ইলমে কিরাত বিষয়ক গ্রন্থ)

আত তানভীর ফী উসূলিত তাফসীর (তাফসীর শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ক পুস্তক)

তারীখে ইসলাম (ইসলামের ইতিহাস)

তারীখে ইলমে হাদীস (হাদীসশাস্ত্রের ইতিহাস)

তারীখে ইলমে ফিকহ (ফিক্হশাস্ত্রের ইতিহাস)

রাজ হুনায়র মীলাদনামা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মীলাদ বিষয়ক গ্রন্থ)

 তরীকায়ে হজ্জ (হজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি)

 লুব্বুল উসূল (ফিকহ শাস্ত্রের মূলনীতি বিষয়ক গ্রন্থ)।

 মশকে ফরাইজ (ফারাইয বিষয়ক গ্রন্থ)।

 মিন্নাতুল বারী (তাঁর সনদ বিষয়ক গ্রন্থ)

 মীযানুল আখবার (উসূলে হাদীস বিষয়ক গ্রন্থ)

 নিজামুল আওকাত (নামায, সেহরী ইফতারের সময়সূচী নির্দেশক ক্যালেন্ডার)।

 ওসীয়তনামা (অন্তিম উপদেশ)

 হাদিয়াতুল মুসাল্লীন (নামাযের মাসআলা-মাসাইল বিষয়ক গ্রন্থ)।

তাঁর সংকলিত প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে:

উসুলুল কারখী (আল-কারখী-এর মৌলিক শাস্ত্রীয়নীতিসমূহ)

 উসুলু মাসাইলিল খেলাফিয়্যাহ (মতবিরোধপূর্ণ মাসআলাসমূহের মৌলিক বিধি-বিধান)

আত তা’রীফাতুল ফিকহিয়্যাহ (ফিক্হশাস্ত্র বিষয়ক পরিভাষাসমূহ)

আল খুতবাত লিল জুমুআত ওয়াল ঈদাইন (জুম‘আ ও দু‘ঈদের খুৎবাসমূহ)

আল কাওয়াইদুল ফিকহিয়্যাহ (ফিক্হশাস্ত্র সম্পর্কীয় বিধানাবলী)

ফিকহুস সুনান ওয়াল আছার (ইসলামী আইনশাস্ত্র ভিত্তিক হাদীস সংকলন)।

তাঁর কৃত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও টীকা-টিপ্পনী হতে প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে রয়েছে:

اتحاف الاشراف  (তাফসীরে কাশশাফের সূরা আলে ইমরান অংশের টীকা গ্রন্থ )।

 حواشى السعدى(শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দীসে দেহলভীর উসূলে হাদীস বিষয়ক মুকাদ্দামার টীকা)।

شكوه وجواب شكوه (শিকওয়া ও জাওয়াবে শিকওয়ার ব্যাখ্যা)।

مقدمه سنن ابى داود (সুনানু আবি দাঊদের ভূমিকা)।

 

ইন্তিকাল

১৯৭৪ সালের ২৭ অক্টোবর মুতাবিক ১৩৯৫ হিজরীর ১০ শাওয়াল রোজ শনিবার মাগরিবের নামাযের পর মুফতী আমীমুল ইহসান (র.) তাঁর খানকায় খতমে খাজেগান পরিচালনার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দু‘আ করেন। অতঃপর উপস্থিত ভক্ত-অনুরক্তগণের সাথে নানা প্রসঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। এ সময় তাঁর কোনো নিকটজন তাঁকে তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্য ও ডাক্তারের পরামর্শের কথা স্মরণ করিয়ে পূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণের অনুরোধ জানান। সে সময় তিনি বলেন, কাল হতে আমি আর কথা বলব না। অতঃপর মজলিস সমাপ্তির ঘোষণা দিয়ে তিনি শয়নকক্ষে চলে যান ও রাত আনুমানিক দশ ঘটিকার সময় শয্যা গ্রহণ করেন। রাত দু’টায় শয্যাত্যাগ করে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেন। এ সময় তার শ^াসকষ্ট শুরু হয়ে যায় এবং তিনি মহান মনিবের দরবারে পাড়ি জমান। পাশের্^ শায়িতা স্ত্রী কন্যা জামাতা সায়্যিদ মুসলিমকে ডেকে আনেন। তিনি এসে মুফতী সাহেবের ধমনীর স্পন্দন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে  তার রূহ দেহ ছেড়ে মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছে। পরদিন (২৮ অক্টোবর) বায়তুল মুকাররম মসজিদে তার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার কলুটোলায় তাঁর খানকা সংলগ্ন মসজিদের পাশে তার মাযার অবস্থিত।



তথ্যসূত্র :

১. https://www.wikiwand.com/en/Sayed_Muhammad_Amimul_Ehasan_Barkati

২. ড. এ. এফ. এম. আমীনুল হক, মুফতী সায়্যিদ মুহাম্মদ আমীমুল ইহসান : জীবন ও অবদান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রথম প্রকাশ : জুন ২০০২ ইং

শেয়ার করুন:
  • জনপ্রিয়
  • সাম্প্রতিক

নির্বাচিত

Don`t copy text!