মাতৃগর্ভে নবী মুহাম্মদ (সা.)

মূল: হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)
অনুবাদ: মুহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী

যখন আবদুল্লাহ উট কুরবানী শেষে প্রত্যাবর্তন করলেন তখন কুতায়লা, অন্য বর্ণনায় রাফীকা বিনতে নওফেল নামক এক মহিলা আবদুল্লাহকে দেখে বলতে শুরু করলো, আপনি যদি এখন আমাকে বিয়ে করেন, তা হলে আপনার এক শত উটের মূল্য আমি দেব। মহিলার এই ইচ্ছা ব্যক্ত করার কারণ হলো তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর মুবারক আবদুল্লাহর কপালে চমকাতে দেখেছিলেন। আবদুল্লাহ জবাব দিয়েছিলেন, আমার পিতা সঙ্গে আছেন। তাঁর অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলেন, আবদুল্লাহর জবাব ছিল, এটা হারাম। এর শিকার হওয়ার চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয়।
“আল-ইনসানুল উয়ূন” নামক কিতাবে ইমাম হালবী (র.) এ ধরনের ইচ্ছা পোষণ করার কারণ বর্ণনা করেন যে, আগের কিতাবগুলোতে উল্লেখ ছিল, শেষ নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ মক্কা শরীফের কুরাইশ খান্দান থেকেই হবেন। সুতরাং এ খবর কিতাবে দেখে অনেক লোক তাদের সন্তানকে এ মর্মে ওসীয়ত করেছিলেন যে, আমার ছেলের নাম আবদুল্লাহ আর নাতির নাম মুহাম্মদ রাখবে। এজন্য সে সময় অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আবির্ভাবের সময় অন্তত চল্লিশ ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ এবং পিতার নাম আবদুল্লাহ ছিল। তখন মহিলারা একান্তভাবে কামনা করত যেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার গর্ভেই জন্ম নেন।
এরপর আবদুল মুত্তালিব আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ওয়াহাব বিন আবদে মনাফ বিন যুহরার কাছে এলেন। তিনি তখন বংশ ও মর্যাদার দিক দিয়ে বনূ যুহরার সরদার ছিলেন। তাঁর মেয়ে আমিনার বিয়ে আবদুল্লাহর সাথে দিয়ে দিলেন।
দ্বিতীয় দিন যখন আবদুল্লাহ কুতায়লার পাশ দিয়ে গেলেন তখন ঐ মহিলা আগের মতো ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। এমতাবস্থায় আবদুল্লাহ কুতায়লাকে আগের মতো বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ না করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কুতায়লা জবাব দিল, গতকাল যে নূর তোমার কপালে দৃষ্টিগোচর হয়েছিল, তা আজ আর দেখা যাচ্ছে না। আমার ইচ্ছা ছিল সেই নূর যেন আমার থেকে প্রকাশ পায়। সেই নূর যেখানে পৌঁছার কথা সেখানে পৌঁছে গেছে। তাই আমার আর আগ্রহ নেই।
হযরত আমিনার গর্ভধারণের পর অনেক আশ্চর্য ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল। খতীব বাগদাদী (র.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের রেহেমে আসেন রজব মাসের জুমআর রাত্রিতে। তখন আল্লাহ তাআলা বেহেশতের পাহারাদার রিদওয়ানকে বলেছিলেন, জান্নাতুল ফেরদাউসের দরজা খুলে দাও। এক আহবানকারী যমীন এবং আসমানে আহবান করে বলেছিলেন, যে নূর থেকে শেষ যামানার নবী সৃষ্টি হবেন, সে নূর আমিনার রেহেমে স্থান লাভ করেছে। এখন তাঁর সৃষ্টি পূর্ণ হয়েছে, সুসংবাদ প্রদানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী হয়ে তিনি মানুষের কাছে আসবেন। হযরত কা’ব আল-আহবার এভাবে রিওয়ায়াত করেন- সে রাত্রে আকাশ ও তার চারপাশে এবং যমীনের সর্বত্র ঘোষণা দেয়া হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুপ্ত নূর তাঁর মায়ের গর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছে। সুতরাং তাঁকে খোশ আমদেদ, অতঃপর আবারও খোশ আমদেদ। সেদিন পৃথিবীর সকল মূর্তি উপুড় হয়ে পড়ে গিয়েছিল। এ সময় কুরাইশগণ দুর্ভিক্ষ ও খরা-পীড়িত ছিল। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনে পৃথিবী শ্যামল হলো, গাছ-পালা ফলবান হলো। চতুর্দিক থেকে তাদের কাছে নিয়ামতরাজি আসতে থাকল। এ কারণে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাতৃগর্ভে আগমনের বছরটিকে বিজয় ও আনন্দের বছর নামে নামকরণ করা হয়েছে।
হযরত ইবনে ইসহাক হযরত আমিনা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, হযরত আমিনা (রা.) বলেন, আমাকে স্বপ্নে সুসংবাদ দেয়া হলো তোমার গর্ভে এ উম্মতের সরদার রয়েছেন। তিনি (আমিনা) বলেন, আমার গর্ভে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন হলো কিন্তু কোনো অসুবিধা অনুভূত হয়নি। শুধু হায়য বন্ধ হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, এক রাতে আমি ঘুম এবং জাগ্রত অবস্থার মধ্যখানে ছিলাম অর্থাৎ অবচেতন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলে গেলেন, তোমার কি জানা নেই তোমার গর্ভে কে? انك حملت بسيد الأنام “তোমার গর্ভে যিনি, তিনি অবশ্যই সমগ্র সৃষ্টির সরদার।” যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলো তখন সেই ব্যক্তি এসে আমাকে বলেন, এ রকম বলো,اعيذه بالواحد من شركل حاسد ثم سميه محمدا ‘আমি একক সত্তার নিকট সকল হিংসুকের অনিষ্টতা থেকে তাঁর হেফাযত কামনা করছি। এরপর তাঁর নাম রেখো মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।’ জাগ্রত হওয়ার পর আমি আমার শিয়রে সোনার এক টুকরায় লেখা দেখলাম:
اعيذه بالواحد من شر كل حاسد وكل خلق رائد من قائم وقاعد عن السبيل عائد على الفساد جاهد من نافث وعاقد وكل خلق مارد بالمراصد فى طرق الموارد.

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, বনূ আমীর এর এক ব্যক্তি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে প্রশ্ন করল, আপনার প্রকৃত বিষয়টি কি? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার শানের প্রকাশ হচ্ছে এমন যে, আমি আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দুআ এবং আমার ভাই ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদের ফল।
হযরত আবূ নাঈম (রা.) হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমিনার গর্ভে অবস্থানের নিদর্শনসমূহের একটি নিদর্শন হচ্ছে, সে রাত্রে কুরাইশদের সকল চতুষ্পদ জন্তু কথা বলেছিল। তারা বলেছিল, কাবার প্রতিপালকের শপথ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভে স্থানান্তরিত হয়েছেন। আর তিনি হচ্ছেন দুনিয়াবাসীদের ইমাম ও প্রদীপস্বরূপ। সেদিন পৃথিবীর সকল স¤্রাটের সিংহাসনসমূহ উপুড় হয়ে পড়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তের চতুষ্পদ জন্তুগুলো পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত সুসংবাদ নিয়ে বিচরণ করেছিল। এমনিভাবে সাগরে বসবাসকারী প্রাণীগুলোও একে অপরকে সুসংবাদ দিয়েছিল। আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভে স্থানান্তরিত হওয়ার পর প্রতি মাসে আকাশে একজন ও যমীনে একজন আহবানকারী আহবান করে বলতেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, বরকতপূর্ণ ও নিরাপদ নবী আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রকাশ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হয়ে গেছে।
আল্লামা কাসতালানী (র.) এই হাদীস উদ্ধৃত করার পর বলেন এ হাদীস দুর্বল। ইমাম যুরকানী (র.) এ হাদীসের উপর একটি অভিযোগ করেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) তখন উপস্থিত ছিলেন না। এ হাদীসের ঘটনা তিনি নিজে দেখেননি এবং কারো থেকে বর্ণনাও করেননি। এ জন্যে হাদীস কীভাবে সঠিক বলে গ্রহণ করা যাবে? পরক্ষণে হযরত ইমাম যুরকানী (রা.) নিজেই জবাব দেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) ও অন্যরা এ হাদীসের সনদ মারফূ হিসেবে নকল করেন। যদিও ভাষার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তদুপরি এ মর্মে সহীহ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। যা এ হাদীসকে শক্তিশালী করে, যেমন-
لم يبق في تلك الليلة دار الا اشرقت ولا مكان الا دخلت النور ولا دابة الا نطقت.
অর্থাৎ এ রাতে এমন কোনো ঘর নেই যা আলোকিত হয়নি এবং এমন কোনো স্থান বাকী ছিল না যেখানে নূর (আলো) প্রবিষ্ট হয়নি, এবং এমন কোনো পশু ছিল না যে কথা বলেনি। মোট কথা অন্যান্য অনেক হাদীস দ্বারা পশুর কথা বলা সাব্যস্ত আছে যদিও পশুরা কি বলেছিল তা স্পষ্ট নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মায়ের গর্ভে যখন দু’মাসের ছিলেন, তখন তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইন্তিকাল করেন। এটাই প্রসিদ্ধ মত। ইন্তিকালের সময় হযরত আবদুল্লাহর বয়স ছিল পঁচিশ বছর। হযরত ওয়াকিদী (র.) এ মতটি বেশি গ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেন। অন্য মত অনুযায়ী তখন তাঁর বয়স আঠার বছর ছিল। এ বক্তব্যকে হাফিয আলাভী এবং ইবনে হাজার সঠিক বলেছেন। এ মতই ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) গ্রহণ করেছেন।
আবদুল্লাহ ব্যবসায়ীদের সাথে ফিরে আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই তিনি ইয়াসরিব অর্থাৎ মদীনা শরীফে নিজ পিতা আবদুল মুত্তালিবের মামার বাড়ি থেকে গিয়েছিলেন। সেখানে এক মাস পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। আবদুল মুত্তালিব যখন কাফেলাকে জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা জবাব দিয়েছিল আমরা তাঁকে মদীনায় অসুস্থ অবস্থায় রেখে এসেছি। এ কথা শুনার পর আবদুল মুত্তালিব তাঁর ছেলে হারিসকে সেখানে পাঠালেন। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন আবদুল্লাহ ইন্তিকাল করেছেন এবং দারে তাবেয়ায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে।
হযরত আবূ সায়িদ আবদুল মালিক নিশাপুরী (র.) معجم الكبير এ এবংالسعادة والشري নামক কিতাবের লেখক হযরত কা’ব থেকে এবং আবূ নুআইম হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে রিওয়ায়ত করেন, আমিনা বলেন, আমার গর্ভ যখন ছয় মাস হয় তখন আমার কাছে এসে একজন লোক বলে, হে আমিনা, আপনি বিশ্বজগতের সর্বোত্তম ব্যক্তিকে আপনার গর্ভে ধারণ করেছেন। তিনি যখন জন্ম নেবেন, তখন তার নাম রাখবেন মুহাম্মদ। আর আপনার বিষয়টি গোপন রাখবেন। হযরত আমিনা বলেন, অতঃপর অন্যান্য মহিলার যা হয়, আমারও তা হলো। অথচ একজন লোকও (পুরুষ হোক বা মহিলা) তা জানত না। আমি ছিলাম বাড়িতে সম্পূর্ণ একা, আর আবদুল মুত্তালিব ছিলেন তওয়াফরত। আমি বিকট একটি শব্দ শুনলাম যা শুনে ভীত হয়ে পড়লাম। অতঃপর আমি সাদা রঙের একটি পাখির ডানা দেখলাম। তা আমার অন্তরকে স্পর্শ করল। তাতে আমার সকল ভীতি ও কষ্ট দূর হয়ে গেল। অতঃপর আমি তাকালাম। দেখলাম একটি সাদা পানপাত্র আমার সামনে রাখা। আমি তা থেকে পান করলাম। এতে সুউচ্চ নূর আমাকে বেষ্টন করে নিল। অতঃপর আমি খেজুর গাছের ন্যায় লম্বা মহিলাদের দেখলাম। তাদেরকে আবদে মনাফ গোত্রের মেয়েদের মত মনে হচ্ছিল। আমি আশ্চর্য হচ্ছিলাম এবং বলছিলাম, কে আছ আমাকে সাহায্য করো। এরা আমার সম্পর্কে কিভাবে জানলো? বর্ণনাকারী বলেন, অন্য এক বর্ণনায় আছে, আমিনা বলেন, অতঃপর ঐ মহিলাগণ আমাকে বললেন, আমরা হচ্ছি ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া, ইমরানের মেয়ে মরিয়ম, আর এরা হচ্ছে বেহেশতের হুর।
তাবারানী (র.) বর্ণনা করেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হলেন, তাঁর হাতের আঙুলগুলি বন্ধ ছিল। শাহাদাত আঙুলি এমনভাবে ছিল যেন তা দিয়ে তাসবীহ পাঠ করছেন। হযরত উসমান বিন আবুল আস (রা.) তাঁর মাতা উম্মে উসমান সকফিয়াহ হতে বর্ণনা করেন, যাঁর আসল নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আবদিল্লাহ, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভূমিষ্ট হওয়ার সময় উপস্থিত হলে আমি দেখলাম, তাঁর জন্মের ঘরখানা আলোয় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে; আর আমি নক্ষত্রগুলোকে অবনত হতে দেখলাম। আমার মনে হচ্ছিল, যেন এগুলো আমার উপর পড়ে যাবে। (বায়হাকী, তাবারানী ও ইবনে আবদিল বার)
হযরত আমিনার রিওয়ায়তে উল্লেখ রয়েছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হওয়ার মুহূর্তে আমি একা ছিলাম আর ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হওয়ার প্রাক্কালে উপস্থিত ছিলাম। সে ক্ষেত্রে এ দু’হাদীসের মধ্যে ভিন্নতা সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে জবাব এভাবে দেয়া যাবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই ফাতিমা বিনতে আবদুল্লাহ উপস্থিত হয়ে এ দৃশ্য দেখেন।
اخرج احمد والبزار والطبراني والحاكم والبيهقي عن العرباض من السارية أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال اني عند الله لخاتم النبين وان ادم لمنجدل في طينته وساخبركم عن ذالك اني دعوة ابي ابراهيم وبشارة عيسي ورؤيا امي التى رأت وكذالك امهات النبين يرين وان ام رسول صلى الله عليه وسلم رأت حين وضعته نورا اضائت له قصور الشام قال الحافظ ابن حجر صححه ابن حبان والحاكم .
ইমাম আহমদ, বায্যার, তাবারানী, হাকীম ও বায়হাকী হযরত ইরবাদ ইবনু সারিয়া (রা.) হতে হাদীস বর্ণনা করেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি তখন থেকেই শেষ নবী যখন আদম আলাইহিস সালাম মাটির সাথে মিশ্রিত ছিলেন। আমি তোমাদেরকে অবহিত করছি যে, আমি আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর দুআ, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সুসংবাদ এবং আমার মায়ের স্বপ্নের ফসল। এমনিভাবে সকল নবীদের মাতাগণ স্বপ্ন দেখে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মা যখন তাঁকে জন্ম দেন তখন একটি নূর প্রত্যক্ষ করেন যাতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে গিয়েছিল।
হাফিয ইবনু হাজার (র.) বলেন, এ হাদীসকে ইবনু হিব্বান এবং হাকীম সহীহ বলেছেন।
হযরত আল্লামা কাসতালানী (র.) বলেন, এখানে নূর দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলার বাণী- قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ অর্থাৎ তোমাদের কাছে আল্লাহর নূর এবং স্পষ্ট কিতাবে এসেছে।
আল্লামা বায়দ্বাবী (র.) বলেন, কুরআনের আয়াতে নূর উল্লেখ করে ইশারা করা হয়েছে কুরআনের প্রতি, কেউ কেউ বলেন, এখানে নূর বলে ইশারা করা হয়েছে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি।
দ্বিতীয় অর্থই সঠিক। যেভাবে বায়দ্বাবী (র.)ও অনুরূপ বলেন, আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, “আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বারা মানুষকে শান্তির পথ দেখান। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে নিবেদিত তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে আসেন আল্লাহরই অনুমতিক্রমে।” (সূরা মায়িদা, আয়াত: ১৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হওয়ার প্রাক্কালে সিরিয়ার প্রাচীর আলোকোজ্জ্বল হয়ে যায় বলে ইশারা করা হয়েছে একথার প্রতি যে, নবুওয়াতের নূরে বিশেষ করে সিরিয়ার যমীন আলোকিত হয়েছিল। কারণ তা ছিল তৎকালীন রাজধানী।
যেমন হযরত কা’ব আহবার বর্ণনা করেন, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে-
محمد رسول الله مولده بمكة مهاجره يثرب وملكه بالشام فمن مكة بدت نبوة نبينا صلى الله عليه وسلم والى الشام انتهي ملكه. لهذا اسرى صلى الله عليه وسلم الى الشام الى بيت المقدس كما هاجر قبله ابراهيم الى الشام. وبها ينزل عيسى بن مريم وهي ارض المحشر والمنشر.
-হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মস্থান হল মক্কা, হিজরতের স্থান হলো ইয়াসরিব, তাঁর রাজত্ব সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুওয়াত আরম্ভ হবে মক্কায় এবং সিরিয়া পর্যন্ত তাঁর রাজত্ব বিস্তৃতি লাভ করবে। এ জন্য তিনি মি’রাজের রাত্রে সিরিয়ায় বায়তুল মুকাদ্দাস ভ্রমণ করবেন। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সিরিয়ায় হিজরত করেন এবং সেখানেই হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন এবং ঐ যমীনেই হাশর হবে।

[হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ‘মুন্তাখাবুস সিয়র’ থেকে অনূদিত।
অনুবাদক: আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য ছাহেবজাদা,
সভাপতি, বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ]

শেয়ার করুন:
  • জনপ্রিয়
  • সাম্প্রতিক

নির্বাচিত

Don`t copy text!